একজন ইবাদ ভাই/চাচ্চু এবং তার বিয়ে

সাইয়্যিদ মুজাদ্দিদ

বিয়ের স্মারকে মানুষ মূলত স্মৃতিচারণ করে অথবা বর-কনের প্রশংসা-বাক্য লেখে। এই লেখার কাজ যে কঠিন তা টের পাই কবি বাশিরুল আমীনের স্মারকে লেখার সময়। কোনো বিয়ের স্মারকে এ আমার প্রথম লেখা ছিলো। কবিবন্ধু হুসাইন মুহাম্মদ ফাহিমের জোরাজুরিতে একরকমের দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম। দীর্ঘদিন পর আবার তরুণ গবেষক ইবাদ বিন সিদ্দিকের বিয়ে উপলক্ষে লিখতে হচ্ছে। ইবাদ বিন সিদ্দিককে আমি কী ডাকবো, তা নিয়ে সব সময় একটু দ্বিধাদ্বন্দে থাকি। মাঝেমধ্যে ভাই, মাঝেমধ্যে চাচ্চু ডাকা হয়। কোনো অভিধা নির্দিষ্ট নেই। এটা একটা বৈচিত্র্যময় অবস্থা। এখন উনার স্ত্রীকে কী ডাকবো, উনিও কি দুটো অপশনই রাখবেন আমার জন্য? এটা ভাববার বিষয়। আর লেখার সুবিধার্থে এখানে ‘ভাই’ সম্বোধন করলাম।

আমারে যখন ইবাদ ভাই এবং সাইফ ভাই (আমার দুলাভাই, বিশিষ্ট ইসলামি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাইফ রাহমান) স্মারকে লিখতে বললেন, দেখলাম সহজ স্মৃতিগুলো এর আগে এতো বেশি কঠিন হয়ে আসেনি। যা মুখে বলা যায়, বারবার– প্রচুর আড্ডায়, তা লেখা যায় না মূলত। অথবা যে প্রশংসাবাক্য আমি সবিনয়ে বলতে পারি, তাও লিখতে পারছি না এখন। অথচ স্মৃতির মতো প্রশংসাগুলো সত্য। তবে ইবাদ ভাইয়ের বিয়ের খবর এবং স্মারকে লিখতে পারার ভাগ্যটা মির্জা গালিবের শায়েরির মতো ঈর্ষনীয় আনন্দের, অত্যন্ত খুশির খবর। গালিব প্রেমিকার দর্শনে বলে উঠেন

‘নিজের ভাগ্য দেখে আমি নিজেই জ্বলে যাচ্ছি ঈর্ষার আগুনে!
তাকে দেখবার অনুমতি পাব, কবেই-বা আমি প্রস্তুত ছিলাম নিজের এমন ভাগ্যদর্শনে!’

সিলেট শহর ছাড়িয়ে যে কজন তরুণ ইসলামি অঙ্গনে কাজে এবং চিন্তায় অগ্রসর হতে পেরেছেন, ইবাদ ভাই তাঁদের একজন। আবদ্ধ চিন্তার বাইরে এসে নিজের অবস্থান তৈরি করে নেয়া দিন দিন কঠিন হয়ে আসছে আমাদের। এ জায়গায় তিনি সবসময় নিজের চিন্তার সাথে কাজের প্রতিফলন দেখিয়েছেন। ইবাদ ভাইয়ের মূল কাজ গ্রাফিক্স রিলেটেড। কিন্তু এর বাইরেও তিনি চিন্তার দায়বদ্ধতা থেকে বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কাজে সময় ব্যয় করছেন। একজন মানুষকে বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তার লেখালেখি এবং কর্ম। এ দুটোর মধ্য দিয়ে তার প্রচেষ্টার যে প্রমাণ রাখছেন প্রতিনিয়ত, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গতবছর বইমেলায় ইবাদ ভাইয়ের চিন্তাভাবনামূলক বই ‘আপনার সমীপে যাহা বলিতে চাই’ প্রকাশ হয়। এ বইয়ে বর্তমান সমাজ এবং মানুষের অবস্থা নিয়ে ইবাদ ভাইয়ের যে চিন্তা প্রকাশ হয়েছে তা অভাবনীয় সুন্দর এবং স্বচ্ছ।

কিছু স্মৃতিচারণের প্রয়োজন ছিলো। ইবাদ ভাইয়ের সাথে তো প্রচুর স্মৃতি। কারো সাথে পরিচয় হলে পরে অসংখ্য স্মৃতি তৈরি হয়। আর ইবাদ ভাই সেখানে নিজের মানুষ, আপন লোক বলতে যা বুঝায়। তার উপর দিলখোলা একজন মানুষ, আনন্দের স্মৃতিগুলো বলতে গেলেও আনন্দ আসে। কিন্তু স্মৃতি লিখতে না পারার দুর্বলতা যেন ঝেঁকে ধরেছে। ব্যক্তি ইবাদ ভাইকে নিয়ে বলতে চাইলেও আরো আরো বলা যায়। বলা যায় ইবাদ ভাই একজন সৌন্দর্যের প্রতীক। তার হাসি, তার চলাফেরা সবই একেকটা সৌন্দর্য ইত্যাদি। কিন্তু বিয়ের স্মারকে বেশি বলাটা অতিরঞ্জিত মনে হয়। মনে হয় কোনো মরহুমের স্মারকে লিখছি। যদিও-বা প্রচলিত আছে পুরুষ মানুষের দুটো জীবন, জীবিত আর বিবাহিত। এখানে বিবাহিতকে মৃতের সাথে তুলনা করা হয়। আমরা বলবো তা না। বিয়ে একটি সুন্দরের পথে যাত্রা। আর সুন্দরকে কখনোই মৃত্যুর মতো ভয়ঙ্কর সত্যের সাথে তুলনা করা যায় না। সুন্দরের দিকে যেতে হয় পুরাতন সমূহ সৌন্দর্যকে সাথে নিয়ে। ইবাদ ভাই এখন সে যাত্রায় উঠেছেন। আমাদের কামনা, এ যাত্রা মসৃণ এবং সুন্দর হোক।

সাইয়্যিদ মুজাদ্দিদ
লেখক : কবি, সংগঠক

Related Articles

Back to top button
error: Content is protected !!