মুহাম্মাদ নামের সংক্ষেপণ বা এব্রিবিয়েশন সংক্রান্ত জরুরি কিছু কথা

লেখাটার সাথে হয়তো অনেকেই একমত হবেন, আবার অনেকে পুরনো ডায়ালগ মারবেন। কিন্তু লেখাটার গভীরতার দিকে একটু দৃষ্টি দিলে আশা করি কেউই আমার সাথে ভিন্নমত পোষণ করবেন না। তো আসুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাই।

‘নাম’ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আদম আলাইহিস সালামকে সর্বপ্রথম নামের শিক্ষাই দেয়া হয়েছিল। অস্তিত্বে যা কিছু আছে সবকিছুর একটা না একটা নাম আছে। থাকতে হয়। মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত, সে হিসেবে তার নাম হতে হবে শুদ্ধ, সুন্দর ও শ্রুতিমধুর।

যা মনে চাইল তা’ই রেখে দিলাম, নামের আগে পরে ইচ্ছে স্বাধীন বিশেষণের স্তুপ লাগিয়ে দিলাম, অথচ সেগুলো ভুল না শুদ্ধ সেটা খেয়াল করলাম না, এটা অনুচিত। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কোনো ভুলকে আমরা এখনো চালিয়ে নিতে পারি না। তা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। সচেতন হওয়া দরকার।

২.
প্রথমেই নামের শুরুতে মুহাম্মাদ নিয়ে কথা বলি। হিন্দুরা উপমহাদেশীয় মুসলিম সম্মানি ব্যক্তিদের নামের শুরুতে তাদের সমাজে প্রচলিত ‘শ্রী’ ও ‘শ্রীমতি’র ব্যবহার শুরু করলে মুসলমানরা নিজেদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার গরজে নামের শুরুতে মুহাম্মাদ ব্যবহার শুরু করেন।

কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপারটি হচ্ছে উপমহাদেশের অন্য কোনো ভাষায় ‘মুহাম্মাদ’ শব্দটি এব্রিবিয়েশনের কবলে না পড়লেও বাংলা ভাষাভাষিদের কাছে এব্রিবিয়েশনের (Abbreviation) পাল্লায় পড়ে কোথাও মোঃ, কোথাও মুঃ, কোথাও মুহাঃ/মোহা:/ মুহা:/ মুহা./ প্রভৃতি আকার নিয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে।

একটু চিন্তা করুন তো, কতটুকু উচিৎ? কতটুকু শুদ্ধ? কতটুকু সুন্দর? একে তো সংক্ষেপণ, তদুপরি ভুল। আমরা জানি বিসর্গ(ঃ) বাংলা বর্ণমালার একটি বর্ণ বিশেষ। এটা কিভাবে সংক্ষেপণের চিহ্ন হতে পারে? বাংলা ভাষার কোন ব্যাকরণের বইয়ে এটিকে সংক্ষেপণের চিহ্ন হিসেবে নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে? এটা চলে আসা ভু্ল।

আমরা কি এ ভুল বহন করেই যাবো? অনেক নামী দামী লোকেরা ব্যবহার করে এসেছেন, তো সমস্যা কোথায়? কথাটা আরেকটি বোকামি। সময় সাশ্রয়ের কথা বলাটাও বালখিল্যতা বৈ কিছুই নয়।

৩.
আরেকটা বিষয় হলো নামের শুরুতে Md (এমডি)’র ব্যবহার। এটাই বা কেমন ব্যবহার! মুহাম্মাদ নামতো নিতে হয় প্রাণভরে, মনখুলে। কিন্তু এই কিপ্টেমি কেনো? পুরো মুহাম্মাদ লেখতে সমস্যা কোথায়? নিজের ভাষার উপর পণ্ডিতি করতে করতে অন্যের ভাষার উপর অযৌক্তিক এ পণ্ডিতি প্রদর্শন কেনো?

বিধর্মীদের যারা এই এব্রিবিয়েশন জানে না তারা বুঝবেটা কী? তারা যদি একটা অফিসের কয়েকজনের নামের শুরুতে এই এমডি দেখে একটা অফিসের বহুসংখ্যক এমডি (managing director) মনে করে হাসাহাসি করে তাহলে কি তাদের দোষ দেয়া যাবে?

কেউ যদি মেডিসিন ডক্টর (Medicinae Doctor) ধরে নেয় তাতেও দোষ দেওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ এটি একটি এহতেমালি বিষয়। সবাইতো আর আপনার এমডি’র মিনিং বুঝবে না। এখানেও সেই একই প্রশ্ন Muhammad বা Mohammad লেখলে অসুবিধাটা কী? কোথায় গলত?

৪.
ধরে নিচ্ছি আপনার জায়গা জমিনের বিশাল সঙ্কট। মুহাম্মদ নামটা লেখার মতো জায়গা আপনার নেই! যাকগে, আপনি যখন এব্রিবিয়েশন করবেনই তাহলে যতটুকু সম্ভব শুদ্ধভাবে করছেন না কেনো? কেনো এই অশুদ্ধর চর্চা?

আমার দাবি রাসূলে আরাবির নাম হিসেবেই যদি লেখেন তবে পুরো মুহাম্মাদই লেখবেন। আর সংক্ষেপণের প্রতীক হিসেবে(ঃ) এটা বাদ দিন। এটা সংক্ষেপ’র চিহ্ন না। বাংলাভাষায় সংক্ষেপের চিহ্ন কী সেটা জেনে নিন। প্রয়োজনে বাংলা একাডেরি দ্বারস্থ হোন।

তবে তার দরকার নেই। আমিই বলে দিচ্ছি। একান্তই যদি সংক্ষেপণ করবেন তাহলে ডট (.) ব্যবহার করুন। মোহাঃ/ মুঃ মোঃ না লেখে মুহা. বা মো. লিখুন। কিছুটা না হয় বিশুদ্ধতার কাছে আসুন। অশুদ্ধ চর্চার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসুন। অনুরোধ থাকলো।

৫.
এই যে আরেকটি বিষয়, মুহাম্মাদ অমুক আহমদ! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দু’টি নামকে একসাথে নিয়ে আসা। টু ইন ওয়ান উইথ রিপিটেশন। নামে আহমদ থাকলে তো নবিজির নাম থাকলো। আবার মুহাম্মদ লাগানোর দরকার কি!

অথবা মুহাম্মদ থাকলে আহমদের দরকার কি? অনেকেতো তিনটা নামও ব্যবহার করেন! এই অতিরঞ্জনের কোনো মানে আছে? আর মহিলাদের নামের শুরুতে মুসাম্মাত লেখা আরেক সপ্তাশ্চর্যের ব্যাপার। মুসাম্মাত’টা এলো কোত্থেকে সেটার ইতিহাস অজানা?

মুসাম্মাত আরবি শব্দ। ইসমে মাফউলের সিগা। যার অর্থ, নামকৃত। নামের প্রারম্ভে এটা নিয়ে আসার কী যৌক্তিকতা? সম্ভব হলে আখতার, খাতুন আর বেগমের কাহিনীটাও জানাবেন।

৬.
সা. > আ. > রা. > রাহ. এ এব্রিবিয়েশনগুলোর ব্যাপারেও একই কথা। কেন করা হচ্ছে এসব? কেন এতো কিপ্টেমি। হাদিসের কিতাবাদীতে হাজার হাজারবার মুহাম্মাদ নাম আসে এবং প্রতিবারই পরিপূর্ণভাবে صلی اللہ علیہ وسلم লেখা হয়ে থাকে।

মুহাদ্দাসিনরা কেন এব্রিবিয়েশের পথে হাঁটেন না? একেতো এব্রিবিয়েশন, তদুপরি ব্র্যাকেট’র ইসতেমাল। বিশেষ করে সা.- এর ক্ষেত্রে—এটা মোটেও ঠিক না। মুহাম্মাদ রাসূল এর নাম শুনার সাথে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলা ওয়াজিব।

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ঐ ব্যক্তির অকল্যাণ হোক, যার নিকট আমার নাম উচ্চারণ করা হলো, অথচ আমার উপর দুরুদ পাঠ করেনি’ – [তিরমিযি]। তো একে ব্র্যকেট ইউজ করে খাটো করবো কেনো?

অগোছালোভাবে কিছু কথা বললাম। ভুল হলে শুধরে দেবেন। শুদ্ধ হলে আসুন! ছড়িয়ে দিই। আমলে নিই। পুরোটা পরার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

Related Articles

Back to top button
error: Content is protected !!