একটি শিক্ষণীয় গল্প ও দাম্পত্য জীবন

বিবাহ বিশ্বনবী (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নত। এর বিতরে রয়েছে ইহ ও পরকালীন কল্যাণ। বিবাহের মাধ্যমে মানসিক, পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি,সৃংখলা রক্ষা হয়। বৃদ্ধি পায় মুমিনের ঈমানের গতি। তবে শর্ত হলো বিবাহের লক্ষ্য ঠিক থাকতে হবে এবং শরীয়তের সীমা রক্ষা করে, বিশ্ব নবীর সুন্নাহের আলোকে বিবাহ সম্পাদন করতে হবে। অন্যথায় কাক্সিক্ষত কল্যাণ ও প্রশান্তি অর্জন হয় না। যার অহরহ নজির রয়েছে আমাদের সমাজে। আর একারণেই বিবাহে আগ্রহীদের প্রতি মনীষীদের উপদেশ গুলো খুবই লক্ষ রাখা দরকার। নিম্নে চমৎকার একটি ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরলাম, যা থেকে এমন অনেক উপদেশ হাসিল করা সম্ভব,যার দ্বারা দাম্পত্য জীবন সুখ শান্তিতে ভরে উঠবে ইনশাআল্লাহ।

হযরত ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া রহ.বলেন, আমি একদা সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ রহ.-এর নিকটে বসা ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আবূ মুহাম্মাদ! আমি আমার স্ত্রীর ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করছি যে,আমি তার কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও তুচ্ছ ব্যক্তি।

সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে ছিলেন। এরপর মাথা উঠিয়ে বললেন, সম্ভবত তুমি সুখ্যাতি ও মানসম্মান অর্জনের লক্ষ্যে তাকে বিয়ে করেছিলে?

লোকটি বলল, হ্যাঁ।

তখন সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ বললেন, যে ব্যক্তি সুখ্যাতি ও মানসম্মান অর্জনের লক্ষ্যে বিয়ে করবে, তার ভাগ্যে অপমান ও অপদস্ততা মিলবে।

যে সম্পত্তির লালসায় বিয়ে করবে, তার ভাগ্যে দারিদ্র্যতা নেমে আসবে। আর যে দ্বীনদারি দেখে বিয়ে করবে, সে দ্বীনদারির পাশাপাশি মানসম্মান ও সম্পদ-সম্পত্তিও পাবে।

অতঃপর সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ রহ.আরেকটা উদাহরণ বলতে শুরু করলেন যে, আমরা হলাম চার ভাই: মুহাম্মাদ, ইমরান, ইবরাহীম ও আমি। মুহাম্মাদ সবার বড়, ইমরান সবার ছোট আর আমি মেঝো।

মুহাম্মাদ বংশমর্যাদার লোভে বিয়ে করলেন, এমনকি তার চেয়ে ভাল বংশে বিয়ে করলেন। ফলে আল্লাহ তাআলা তাকে অপমানের পরীক্ষায় ফেলে দিলেন।

ইমরান সম্পদের লালসায় বিয়ে করল, এমনকি তার চেয়ে সম্পদশালীকে বিয়ে করল। ফলে আল্লাহ তাকে দারিদ্র্যতার পরীক্ষায় ফেলে দিলেন। তারা তার যাবতীয় সম্পদ নিয়ে নিল, কিছুই দিল না।

আমি উভয়ের এই অবস্থা দেখে পরামর্শের জন্য হযরত মা’মার বিন রাশেদের কাছে আসলাম। তাকে আমার ভাইদের কাহিনী শুনালাম।
তিনি আমাকে হাদীস শুনালেন—

আবু হুরায়রাহ্ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (মূলত) চারটি গুণের কারণে নারীকে বিবাহ করা হয়; নারীর ধন-সম্পদ, অথবা বংশ-মর্যাদা, অথবা রূপ-সৌন্দর্য, অথবা তার ধর্মভীরুতা দেখে। (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) সুতরাং ধর্মভীরুকে প্রাধান্য দিয়ে বিবাহ করলে সফলতা আসবে।

আর যদি এরূপ না করে অর্থাৎ ধর্মভীরু মহিলাকে প্রাধান্য না দেয় তাহলে ধ্বংস অবধারিত! [বুখারী, ৫০৯০; মুসলিম, ১৪৬৬]
আরও হাদীস শুনালেন যে, সে নারী সবচেয়ে বরকতময়, যার রসদ সবচেয়ে কম।

সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ বললেন, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহর অনুসরণে আমি বাহ্যিক জৌলুসের উপর দ্বীনকে প্রাধান্য দিয়ে বিয়ে করি। ফলে আল্লাহপাক আমাকে দ্বীনের সাথে সাথে ধনসম্পদ, মান-সম্মান এবং সুনাম, সুখ্যাতি সবই দিয়েছেন। (ঘটনাসূত্র : হিলয়াতুল আউলিয়া)

যাক, জামেয়া রেঙ্গার সুপরিচিত ফাজিল, কর্মমুখর তরুণ আলেম, হযরত শায়খুল কুররা রহ.-এর সুযোগ্য সাহেবযাদা, সৃজনঘর সাহিত্য ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়ভাজন মাওলানা ক্বারী ইবাদ বিন সিদ্দিক বিবাহ করতে যাচ্ছেন জেনে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। ইবাদ বিন সিদ্দিক একজন কর্মদক্ষ ও কর্মতৎপর আলেমের প্রতিচ্ছবি। আশাকরি তার কর্মতৎপরতা বিবাহের মাধ্যমে আরো বৃদ্ধি পাবে, এবং তার দাম্পত্য জীবন হাদিসে বর্ণিত কল্যাণের দ্বারা ভরে উঠবে। মহান আল্লাহর দরবারে তার জন্য এটাই আন্তরিক কামনা।

আহমদ কবীর খলীল
লেখক : শিক্ষক, জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গা, সিলেট
সভাপতি, সৃজনঘর

Scroll to Top