ইবাদের প্রতি প্রত্যাশা

আলেম-বিজনেসম্যান হিসেবে ইবাদের আবেগ এতোদিন একমুখী ছিলো। বিবাহিত জীবনে প্রবেশের পর সে আবেগে স্থান নেবে জীবনপল্লবে সুতীক্ষè নতুন এক উপাদান। সুতরাং আবেগের চাদরে টান তো পড়বেই। ইবাদকে তখন টাল সামলাতে হবে। আমি নিশ্চিত ইবাদের ওয়ারিসে আম্বিয়া বলেই টাল সামলানোর সঞ্জীবনী শক্তিও আছে। সংসার মানে এ সবই। এ পাশ থেকে ওপাশে— জীবনের দাঁড়িপাল্লার কাঁটায় মৃদুমন্দ ঢেউ তোলা। বাংলা ভাষায় ‘ভারসাম্য’ বলে যে ভারহীন শব্দটি সংগুপ্ত হয়ে আছে, তার সফল ইস্তেমালের নামই ‘সংসার’।

ছন্দদীপ্ত সাহিত্যিক ও ওয়েববিশেষজ্ঞ ইবাদ। যাকে তারকাখচিত বিশাল আকাশই বুকে নিতে পারে। সেখানে তার জীবনে যিনি আসছেন বধু হয়ে, তিনি কি পারবেন তার জীবনকে করে তুলতে আরো ছন্দময়? আরো বর্ণিল? আরো আরো বহুতলীয়?

হ্যাঁ, অসম্ভব নয় কিছু। তবে এর জন্য চাই প্রাণময় ভালোবাসা। যে ভালোবাসা গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরৎ-হেমন্ত-শীত ও বসন্ত সব ঋতুতেই প্রাণবন্ত। আর চাই সমঝোতার পুষ্পসম্ভার- যা প্রেম-দ্রোহ-খরা-জরা-মান-অভিমান সব কিছুকে করে তুলবে সুবাসিত। তবেই না স্বার্থক দাম্পত্য জীবন।

ইবাদের কাজ মানে ইসলামি চেতনার একটা ম্যাসেজ থাকবেই। সেটা থাকে বলেই তার আদর্শিক ডিজাইন গ্রাহকের রসোদ্দীপনাকে আহত করে না। লেখালেখিতেও তিনি সমানতালে প্রাজ্ঞ। একটি স্বতঃস্ফূর্ত নদীর মতো সাবলীলভাবে তিনি পাঠককে নিয়ে এগিয়ে যান। মাঝে মাঝে সেখানে ঝড়েরও দেখা মেলে। এতে পাঠক নতুন গতি পান। শিহরিয়ে উঠেন। রক্ত টগবগ করে। সাহসের রোদ পাঠকের চোখে-মুখে আছাড় খেতে থাকে।

ইবাদ বিন সিদ্দিক নতুন জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন, এ জন্য তাকে এবং তার নব পরিণীতাকে অভিনন্দন এবং মোবারকবাদ। বিয়ে মানুষের জীবনে পূর্ণতা আনে— হরহামেশা আমরা এ কথা শুনে আসছি। অবশ্যই পূর্ণতা আনে। কিন্তু একজন কারি ও আলিমের জীবনে এ পূর্ণতার রকমফের কেমন?

অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, পূর্ণতাকে যদি আবেগের লাল-নীল-বেগুনি-রেশমী নকশাদার চাদর কল্পনা করা হয়, তাহলে এরও একটি নির্দিষ্ট পরিধি ও আয়তন আছে। শীতের রাতে এ চাদরে টান পড়বেই এবং পড়লে একপাশ অপূর্ণ হবেই। গ্রীষ্মেও এমন হতে পারে। তবে অনুভবের জন্য গ্রীষ্ম থেকে শীতই উত্তম ঋতু। ইবাদ সাহিত্যবোদ্ধা বলেই ঋতুভেদের এ পার্থক্য তার অজানা নয়।

কবি আল মাহমুদ বলেছেন—‘স্বপ্নের ভেতর দিয়ে যে জীবন দেখা যায়, তার নাম ‘কবিতা’। কল্পনায় তৈরি করা হয় কবিতার জগত। কিন্তু সে জগতে বাস্তব জীবনের শব্দ ও দৃশ্যাবলী চিত্ররূপময় হয়ে ওঠে। স্বপ্ন ও বাস্তবতার এই জড়াজড়িতে কবির মস্তিস্কে তৈরি হয় প্রেমরাজ্য। এ কারণে আমি বলি কবি মাত্রই প্রেমিক। যে স্বপ্ন দেখে না, সে কবি নয়। কিন্তু প্রত্যেক মানুষ যেহেতু স্বপ্নচারী, অতএব প্রত্যেকেই কবি। আর মানুষ যেহেতু প্রেমিক না হয়ে পারে না, অতএব প্রত্যেক মানুষ কবি।

কিন্তু অসাধারণ কবি থাকেন খুব কম। একটি জাতির হাজার বছরের পুণ্যে একজন অসাধারণ কবি জন্ম নেন। আমি দীর্ঘ দিন ধরে অসাধারণ কোন কবিতার গন্ধ শুঁকতে উন্মুখ হয়ে আছি। বাংলা কবিতার শরীর হাতড়াচ্ছি অসাধারণ সৃষ্টি বেদনার লক্ষণের আশায়।’
আমরা মনে করি আমাদের ইবাদ আল মাহমুদের সেই আশা পূর্ণ করতে পারবেন—যদি তিনি নিয়মিত লিখে যান।
এবার বধু আসবে তোমার
রইবে না আর তুমি কুমার
মুহতারামা হবেন তিনি
দু’জীবনের প্রিয় সঙ্গিনী
কায়েম করো ইনসানিয়াত
রইলো এবার এই মোনাজাত

কাজী আবুল কালাম সিদ্দিক
লেখক : খ্যাতিমান অনুবাদক, বহু গ্রন্থপ্রণেতা, চট্টগ্রাম

Scroll to Top