বাংলা ভাষায় ব্যঞ্জনবর্ণের ‘ব’ অধ্যাক্ষরটি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সব রেখে আমরা শুধু ‘ব’ দিয়ে শুরু মাত্র দুটি শব্দ নিয়ে হালকা বাতচিত করব।
ব-কে আমরা প্রধান করে একটি শব্দ তৈরি করেছি। বই এবং বউ। ব-য়ের পরে স্বরবর্ণ হিসেবে অগ্রাধিকারী হ্রস্ব-ই, এর পরের অবস্থানে হ্রস্ব-উ। ফলে স্বভাবতই বই এবং বউয়ের মধ্যে প্রথমে আমরা ‘বই’কে গ্রহণ করেছি। সূত্রানুযায়ী ‘বউ’-এর অবস্থান পরে এবং এটাই হতে চলেছে!
দুঃখজনক হলেও সত্য, লেখালেখির জগতে প্রায় যুগপূর্তি হতে চললেও এখনো মৌলিক কোনো ‘বই’ নেই আমার। অথচ একাডেমিক প্রক্রিয়ায় অনেকের জুনিয়র হয়েও আজ আমি দুজন ছেলেসন্তানের গর্বিত পিতা! অপরদিকে, ইবাদ ভাই বউসোহাগ না পেলেও বইসোহাগ অলরেডি পেয়ে গেছেন।
সরাসরি আন্ডারগ্রাউন্ডে প্রবেশ করি। ইবাদ বিন সিদ্দিক। একজন বরেণ্য আলেমের সাহেবযাদা। একই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া। দু-বছরের সিনিয়র। যদিও বয়সে কে বড়- ইবাদ নাকি ইলিয়াস, এটা নিয়ে আমরা প্রায়শই বিতর্ক করি। অনেকটা ‘টকশো‘র রেজাল্টের মতো এ নিয়ে আমাদের মধ্যে আদৌ কোনো সমাধান হয়নি। যদিও আমি তাকে ‘ইভাদ্ভাই’ বলে বলে পটিয়ে থাকি, আর তিনি আমাকে নাম ধরে জপ করে আনন্দ লাভ করেন। তবু, কদাচিৎ কোনো কাজের প্রয়োজনে বা সামাজিকতারক্ষায় ‘ইলিয়াস ভাই’ বলে যখন পরিচয় করিয়ে দেন, তখন আমি বেজায় খুশি হই।
২.
ইবাদ ভাইর সঙ্গে আমার বিবিধ সম্পর্ক। একজন কর্মচঞ্চল তারুণ্যদীপ্ত পুরুষ। কমপিউটারের সঙ্গে তার অনিঃশেষ সখ্যতা। দিবানিশি ধ্যানজ্ঞান। মাউসে হাতের নরম-কোমল চাপড়ে প্রতিনিয়ত শিল্প রচনা করেন। মাথা খাটিয়ে নিত্যনতুন আইডিয়া বের করেন। এ ছাড়া তার আরেকটি গুণ হচ্ছে, বাঙালি হয়েও ভালো ভালো চাইনিজ রেস্টুরেন্টে আমাদের নিয়ে মাঝেমধ্যে পার্টি দেন। বিনা সংকোচে হাজার টাকার বিল-আপ করেন। মোবাইলের ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে বিকাশ থেকে সেন্ডমানি করেন। এ হিসেবে বলা যায়, ইবাদ ভাই একজন ‘দিলখোলা’ গুণী মানুষ।
দুনিয়ার প্রতিটা মহৎ কাজেই ‘নেপথ্যনায়ক’ হিসেবে কিছু মানুষের ভূমিকা থাকে। ইবাদ ভাই বিয়ে করছেন, এটায় যদি তার কোনো ক্রেডিটথেকে থাকে, তবে নেপথ্যে তাকে ফুঁসলিয়ে-খুঁচিয়ে বিয়েমুখী করতে আমার ভূমিকা মোটেও কম না।
৩.
ইবাদ ভাই বিয়ে করবেন তারই বা-পাঁজর থেকে তৈরি এক ষোড়শীকে। ইবাদ ভাই তাকে বরণ করে নেবেন। একান্ত নিজের করে নেবেন। অতঃপর আগলে রাখবেন। তাতে আমার কী আসে যায়? না বিষয়টি এমন না; ইবাদ ভাই বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন, বর সাজবেন, ভবিষ্যৎ পিতা হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছবেন, মুফরাদ থেকে মুরাক্কাব হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করবেন—এটা ভেবে আনন্দ পাই। দিলদেমাগ খুশিতে ভরে ওঠে।
শেষ কথা এবং ভূমিকা হচ্ছে, আমাদের ইবাদ ভাই বিয়ে করছেন। এটা গুড নিউজ। তার ওপর প্রথম বিয়ে; ভালোলাগা তখন আরও বেড়ে যায়। কারণ, ইবাদ ভাই দ্বিবিধ সনদধারী। তাই আমরা আশা করতেই পারি যে, ইবাদ ভাইর বিয়ের পরিধিটাও অন্তত বহুবিধ হবে। তার মতো মানুষ ইনসাফ রক্ষা করতে পারবেন, এমন সুধারণা বেশ আগ থেকেই আমরা অনুভব করে আসছি।
তার বিয়ে উপলক্ষে স্মারক প্রকাশ হচ্ছে। কিছু লিখতে হয় বলে লিখলাম। যদিও ইবাদ ভাইকে নিয়ে আমার হৃদ্যিক কিছু কথা বলার এবং লেখার ছিল; কিন্তুএই মুহূর্তে তেমন কোনো মোড নেই। এখন যেমন রাতবিরাতে তাকে শহরের রাজপথে নির্মোহ ভঙ্গিতে হাঁটতে দেখা যায়, তখন যে এভাবে আর দেখা যাবে না! তার বিয়োগআঁচ করতে পেরে আমি এখন থেকেই শোকাতুর।
শেষ করার আগে শেষ কথা বলে নিই, ইবাদ ভাইর প্রথম বিয়েতে আমার শরিক হওয়ার সৌভাগ্য হচ্ছে। অন্তত এই জনমে তার আরও দু-তিনটে বিয়েতে শরিক হতে চাই। কারণ, ভাবীর প্রতি আমাদের সেই বিশ্বাস শতভাগ আছে; তিনি এমন সুযোগ দেবেন।
একটি সুন্দর আগামী বিনির্মাণের নিয়তে ‘বিয়ে’র মতো অত্যন্ত সাহসী, দূরদর্শী, পুণ্যময় ও মজাদার একটি সিদ্ধান্তগ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি ইবাদ ভাইকে। অপরদিকে ভাবীকে জানাই আন্তরিক মোবারকবাদ, সালাম ও শুভেচ্ছা।
ইলিয়াস মশহুদ
লেখক : সম্পাদক, কওমিকণ্ঠ ডটকম