আইলারে দামান্দর বন্ধু খইতা দুকান খতা…

একজন ব্যাচলরের সবচেয়ে বড় সান্ত¡না কী হতে পারে? যখন দেখে তারই নিকটতম কোন বন্ধু এখনো তার মতোই আছে। ধরে নেয়া যেতে পারে ইবাদ সান্ত্বনার মতো একটা জায়গা ছিলো, কিন্তু এখন সেও বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। ব্যাপারটা আমার কাছে আনন্দের আবার ঈর্ষারও বটে!

ইবাদ আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক অনেক পুরনো এবং গাঢ়। যদিও এখন দুজন ভিন্ন ভিন্ন দুটি শহরে থাকি কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বের মধ্যে কোন দূরত্ব নেই। প্রয়োজনে ছুটে আসি পরস্পরের কাছে। ছাত্রজীবনে আমরা বিস্তর স্বপ্ন দেখতাম একসাথে। কত স্বপ্ন তা বলে শেষ করার মতো না। সবসময় একসাথেই থাকতাম, একসাথে ঘুরতাম। কোন প্রয়োজনে আমাকে না পেলে আমার খোঁজে ইবাদের কাছে, ইবাদকে না পেলে তার খোঁজে আমার কাছে আসতে হতো। মিছিল, মিটিং, সংগ্রামে-রাজপথে হাতে হাত রেখে একসাথে চলেছি। নানামুখি প্রতিভার অধিকারী সে। আইটি সম্পর্কে তখন থেকে তার বেশ ধারণা। যখন আমিও ফেসবুক বুঝতাম না তখন সে ফেসবুক ব্যবহার শুরু করলো না শুধু আমাকেও সে ফেসবুক আইডি খোলে দিলো। আমার ব্যক্তিগত যে ফেসবুক আইডি আছে সেটা তারইখুলে দেয়া। আমি যেখানে তারও অবস্থান সেখানে আর সে যেখানে আমারও অবস্থান সেখানে থাকতো। মোগলাবাজার এলাকায় দুজনের লজিংও পাশাপাশি ছিলো। যখন তখন একে অন্যের লজিংয়ে ছুটে যেতাম। আড্ডা দিতাম। লজিংবাড়ির মানুষ বিরক্ত হচ্ছেন কিনা, লজিং ছুটবে না থাকবে আমরা সেসবের পরোয়া করতাম না। কনকনে শীতের রাতে সিলেট শহরে ঘুরে রাত বারটার পর হুমায়ুন চত্ত্বর অপেক্ষা করতে করতে গাড়ি না পেয়ে ট্রাক থামিয়ে গন্তব্যে ফেরাসহ ফেলে আসা জীবনের বাঁকে তার সাথে বহু রোমাঞ্চকর ঘটনা আছে। প্রথম মোটর বাইক চালানো শিখে আমাকে নিয়ে শ্রীমঙ্গল যাবার পথে দুজন মরতে মরতে বেঁচে গেছি! ‘কালক্রম’ নামে একটি ম্যাগাজিন আমরা বের করতাম। সে প্রকাশক আমি সম্পাদক। কী স্মৃতিবহুল সে দিনগুলো…।

ইবাদ একাধারে শিক্ষক, উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ি, সমাজ চিন্তক। এছাড়াও সৃজনশীল নানা কিছুর সাথে সে যুক্ত। লেখালেখিতেও রয়েছে তার ভালো হাত। নিজের লেখা বইও আছে। নানাদিক থেকে হৃদ্ধ থাকলেও একটা জায়গায় শূন্যতা ছিলো। সে শূন্যতার খাঁ খাঁ প্রান্তরে কোন একজনের লাগি মনটা আঁকুপাঁকু করতো। গুঞ্জনের শুরু থেকে জানতাম। নিজেও যে চেষ্টা করি নি তা নয়। রহস্যের রাজকন্যাকে পাচ্ছিলাম না।

রমজানের ঈদের পর দুজন কমলগঞ্জ ও আশপাশে ঘুরতে বের হই। সরইবাড়িতে রাত্রিযাপনও করি। সেদিনও এইসব নিয়ে একান্ত আলোচনা জমলেও একসময় রসিকতায় পথ হারায়। তারপর আখতা একদিন শুনলাম সত্যি সত্যি তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। সেই জানালো। তার কাছ থেকে প্রাসঙ্গিক কিছু জেনে নিশ্চিত হলাম, হ্যাঁ- এবার ইবাদ বিয়ের পিঁড়িতে বসছে! অলির কথা শুনে বকুল হাসবে। চাঁদের আলোয় এবার রাত ভরে ওঠবে। ফাগুন হবে সত্যিকারের বসন্ত মুখরিত। শুভ এ সন্ধিক্ষণে ইবাদ ও তাহমিদা দুজনের প্রতি অনেক অনেক শুভ কামনা।

জীম হামযাহ
লেখক : বরের বন্ধু, তরুণ গল্পকার

Scroll to Top