স্বপ্নের চাষ হবে, ফুটবে বাহারি ফুল

ইবাদুল হক। সুখ্যাত সিদ্দিকী পরিবারের সন্তান। বাবার নামের সাথে মিলিয়ে ইবাদ বিন সিদ্দিক। পরিচয় এতোটুকুই যথেষ্ট ছিলো। আছেও।

পাশাপাশি তিনি তার ব্যক্তিগত চিন্তা-চেতনা নিয়ে একটি স্বতন্ত্র পরিচয় বহন করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।

ইবাদ বিন সিদ্দিক। মাদরাসা পড়ূয়া একজন আলম।একটি মাদরাসার শিক্ষক। একজন সফল ব্যবসায়ীও। পাশাপাশি জাগতিক শিক্ষায়ও সমান পদচারণা। এখনও চলছে অধ্যায়ন। গন্তব্য আরো বহু দূর।…আশা পূরণ হোক।

মাওলানা নিজেকে একটু ভিন্ন ধারায় পরিচালিত করতে চান। তবে তার অর্থ এটা নয় যে, তিনি নীতি আদর্শ পরিবর্তন করে ফেলবেন। বরং সমাজকে তার মতো করে সাজাতে চান। তিনি একটি এমন সমাজ চান,যেখানে বৈষম্য থাকবেনা। ন্যায়-সাম্য এবং সহমর্মিতা থাকবে। তিনি চান সমাজের সকল শান্তিতে থাকুক। বড় ছোট সকলে নিজের কক্ষপথে হাঁটুক। সবাই বাঁচুক;তবে প্রাণখুলে।

ইবাদ বিন সিদ্দিক। তিনি একজন সমাজচিন্তক। তিনি এই পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে তিনি এই কাজটাতে একটু তাড়াহুড়া করে ফেলেছেন বলে আমার মনে হয়। পরিবারচিন্তা কিংবা ব্যাক্তিচিন্তাকে এতোদিন কেনো কম গুরুত্ব দিলেন সে প্রশ্নের জবাব একমাত্র তিনিই দিতে পারবেন।
মাওলানা ইবাদ বিন সিদ্দিক। তিনি আমার মামা।একান্ত আপনজন। তার ব্যক্তিগত অনেক কিছুই আমার সাথে শেয়ার করেন।আমিও।

বুঝি, বুঝাই, শিক্ষা নিই। এভাবেই চলছে। মাঝে-মধ্যে বিয়েটিয়ে নিয়েও আলোচনা হতো। বরাবরই দেখতাম পরম আগ্রহ থাকলেও অনাগত এই জিন্দেগীটা নিয়ে তার কৌতূহলের পাশাপাশি অজানা আশঙ্কাও কাজ করছে। অভয় দিতাম,সাহস যোগাতাম; কিন্তু একটা বউ মিলিয়ে দিতে না পারার ব্যর্থতা আমাকে সত্যিই কষ্ট দিতো।

অবশেষে তিনি একজন তাহমিদার খোঁজ পেয়েছেন। ভয়-শঙ্কা আর কৌতূহলের ইতি টেনে একটি সুন্দর জীবনের দিকে পা বাড়াচ্ছেন। একজন দ্বীনদার পাত্রীর সন্ধান পেয়েছেন; যেমনটি তিনি চেয়েছিলেন। এবার একটি পরিশালিত-পরিমার্জিত জীবনের সূচনা ঘটাবেন। পরিবার ও ব্যক্তিচিন্তায় মনোনিবেশ করবেন। এখন স্বপ্নের চাষ হবে। একটি পরিকল্পিত ভবিষ্যতের আশায় তিনি বীজ বুনবেন। বাহারী ফুল ফুটবে এবার। সবকিছুই ভালো। এই ভালোটা তিনিও উপভোগ করবেন ; উনিও; আশা থাকলো। দোয়াও থাকলো।

মাওলানা ইবাদ বিন সিদ্দিক। একটু জেদি। একটু আত্মাভিমানী। আত্মসম্মানটাকে খুব খেয়াল করেন। একারণে তিনি অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবাদীও। তবে এই জেদ,আত্মাভিমান, আত্মসম্মানবোধটাকে এবার কিছু কন্ট্রোল করতে হবে। কারণ, এসমাজটা কম্প্রোমাইজ নীতির উপর নির্ভর। বিশেষকরে বৈবাহিক জিন্দেগীতে এই নীতির বিকল্প নাই। পারিবারিক জিন্দেগীতেও। আশাকরি বিষয়টি বিবেচনায় থাকবে।

শেষ করার আগে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে নিই।

অনেকের কাছেই ‘বিয়েস্মারক’ একটা অহেতুক কাজ কিবা নিছক রস-ম্যাগাজিন হিসেবে বিবেচিত। আমার কাছে মোটেও তেমনটি মনে হয় না; বরং একেকটা স্মারকে এমন কিছু কথামালা থাকতে পারে যা কারো দাম্পত্য জীবনে সুখের কারণ হয়ে যেতে পারে। কোনো অশান্ত দাম্পত্যে শীতলতা এনে দিতে পারে। দাম্পত্যের যে-কোনো সমস্যার সমাধানে স্মারকের কয়েকটি লাইন রাখতে পারে সালিশের ভূমিকা। তাই স্মারককে তুচ্ছ নয় সুউচ্চ মর্যাদা দিতে হবে। বিশেষত জ্ঞানী-গুণি-সৎ মানুষের বিয়েস্মারক নিছক স্মারকই নয়, ক্ষেত্র বিশেষে প্রামাণ্যগ্রন্থের মর্যাদাও রাখে;একথাটা বিবেচনায় রাখতে হবে।

একটি স্মারকে কতো রকম সৃষ্টির সমন্বয় ঘটে সেটা কল্পনারও বাইরে। কতো সৃজনশীল, রুচিশীল লেখকের বিশুদ্ধ চিন্তা,উপদেশ, আবদার আর বৈধ হাস্যরসের সমাবেশ হয় একটি স্মারকে তার হিসাব কে নেয়! বিন সিদ্দিকের বিয়ে স্মারকের কথাই ধরা যাক, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে দেখবেন, শুধু সৃষ্টি আর সৃষ্টি।

সবশেষে মামার দাম্পত্য জীবনের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করছি। তাদের আগামী জীবন সুন্দর-সুখময় হোক, কুসুম বিলাসে ভর উঠুক তাদের দাম্পত্যের প্রতিটি ক্ষণ; জগতের সাথে পাল্লা দিয়ে হাসি খেলায় মেতে উঠুক তাদের পরবর্তী প্রজন্ম, এই শুভকামনাও রইলো।

শামছুল হক ইবনে সিরাজ
লেখক : শিক্ষক, ইমাম ও খতিব

Scroll to Top