সুখী সংসার

এক.
জীবনের দীর্ঘ একটি সময় আমি শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফি রাহিমাহুল্লাহ এর সাহচর্যে কাটিয়েছি। এজন্য খুব কাছ থেকে হজরত শায়খ রাহিমাহুল্লাহ এর জীবনকে পর্যবেক্ষণের কোশিশ করেছি। হজরত শায়খ রাহিমাহুল্লাহ এর বৈবাহিক জীবনের আলোচনায় সবসময় একটি কথা আমি বলি যে, আমার জীবনে হজরত শায়খ ও তাঁর মুহতারমা আহলিয়ার মত সুখী দম্পতি আমি আর কাউকে দেখিনি। জীবনের শেষ অংশে উপনীত হয়েও একের প্রতি অন্যের যেরকম মুহাব্বত তাঁদের মাঝে ছিল সেরকম মুহাব্বত বর্তমানের নবদম্পতিদের মাঝে পাওয়াও দুষ্কর। তাঁদের এই ‘সুখী জীবন’ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে এর সার-নির্যাস কুরআন-সুন্নাহে খুঁজে পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ তাআলা বিবাহ ও পরিবার গঠন নিয়ে যেসব আয়াত নাজিল করেছেন এবং হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলোর ওপর যেভাবে আমল করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন, তা যদি কেউ ধারণ করে নিতে পারে তাহলে সেও এমন সুখের ভাগীদার হয়ে যাবে। এসম্পর্কিত আয়াত ও হাদিস নিয়ে আলোচনা শুরু করলে শেষ করা অসম্ভব হয়ে যাবে; বরং এসম্পর্কিত আয়াত ও হাদিসের আলোকে হজরত শায়খ রাহিমাহুল্লাহ আমাকে যে নসিহত করে ছিলেন, সে নসিহতের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আমি নিম্নে উল্লেখ করছি। হজরত শায়খ রাহিমাহুল্লাহ নসিহত হিসেবে আমাকে বলেছিলেন:

(১) ‘যখন বিয়ে করবে, তখন পুরোপুরিভাবে সুন্নতের অনুসরণ করবে এবং বিয়ের পর নিজের পরিবারকে সুন্নতের আলোকে গড়ে তুলবে। স্ত্রী যদি বে-আমলি হয় বা তার মাঝে কোনো দোষ থাকে, তাহলে নরমভাবে বুঝিয়ে ধীরে ধীরে ইসলাহ করবে। এক মূহুর্তেই তাকে ইসলাহের চেষ্টা করবে না, না হয় সে উল্টো আর বিগড়ে যাবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশও এটা। কেননা, তিনি বলেছেন, “তোমরা নারীদেরকে উত্তমভাবে নসিহত করবে। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে উপরের হাড়টি বেশী বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙ্গে যাবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাঁকাই থাকবে। কাজেই নারীদেরকে নসিহত করতে থাক।”’

(২) ‘এভাবে তুমি তোমার স্ত্রীর প্রতি সু-ধারণা রাখবে। তাকে অবিশ্বাস করবে না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীর প্রতি সু-ধারণা রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন কেউ যেন রাতের বেলা পরিবারের কাছে না যায়। আর এর কারণ হল, মানুষের মনে যেন সন্দেহের প্রবণতা সৃষ্টি না হয়। অর্থাৎ কোন মানুষ নিজ স্ত্রীকে দূরে কোথাও সফরে যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হল, কিন্তু স্ত্রীর বিশ্বাস যাচাইয়ের জন্য হঠাৎ রাতে উপস্থিত হল এজন্য যে, তার অনুপস্থিতে স্ত্রী কি করে তা দেখবে বলে।
এভাবে করা উচিৎ নয়; বরং স্ত্রীর প্রতি সু-ধারণা রাখা উচিৎ। কেননা, স্বামী যদি স্ত্রীকে অবিশ্বাস করা শুরু করে, তাহলে স্ত্রীও স্বামীকে অবিশ্বাস করা শুরু করবে। আর তখন থেকে সংসারে অশান্তি শুরু হয়ে যাবে।’

(৩) ‘স্ত্রীর প্রতি সবসময় মুহাব্বত রাখবে। তার সাথে বৈধ হাসি-মজাক করবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজওয়াজে মুতাহহারাতকে যেভাবে মুহাব্বত করতেন, সেভাবে তাদের সাথে হাসি-মজাকও করতেন। তাঁদের বৈধ হাসি-মজাকে তিনি শরিক হতেন।পরিবারে শান্তি বয়ে আনার জন্য, স্ত্রীর মন-মিজাজ ঠিক রাখার জন্য এগুলো জরুরি। বৈবাহিক জীবনকে সুখী করার শিক্ষা সিরাতের পাতায় পাতায় উল্লেখ রয়েছে। এগুলো নিজের সাথে ধারণ করে নিতে পারলে সুখী পরিবার গঠন করতে পারবে। আল্লাহ তাআলা তোমাকে সে তাওফিক দিন। আমিন।’

দুই.
ইবাদ বিন সিদ্দিক ভাইয়ের সাথে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। সম্পর্ক তার বড় দু-ভাইয়ের সাথেও। তারা সবাই হৃদ্যতাপূর্ণ মানুষ। তারা তাদের মরহুম পিতা শায়খ আলি আকবর সিদ্দিক রাহিমাহুল্লাহ এর সুযোগ্য উত্তরসূরী। ইবাদ বিন সিদ্দিক ভাই আগামী ১০ জুন ২০২১- এ বৈবাহিক জীবনে পদার্পণ করবেন। এ উপলক্ষে একটি স্মারক প্রকাশিত হচ্ছে।স্মারকটিতে ইবাদ বিন সিদ্দিক ভাইসহ সবার জন্য নিয়ামত স্বরুপ শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফি রাহিমাহুল্লাহ এর কয়েকটি নসিহত উল্লেখ করেছি। মহান আল্লাহ তাআলা ইবাদ বিন সিদ্দিক ভাইসহ আমাদের সবাইকে সুখী করুন। কুরআন-সুন্নাহের রঙে জীবনকে রঙিন করার তাওফিক দিন। আমিন।

হাসান আনহার
লেখক : খাদিম ও খলীফা, শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী রহ.

Scroll to Top