বিয়ে আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নিয়ামত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। ঈমানের পূর্ণতার সহায়ক। চারিত্রিক আত্মরক্ষার হাতিয়ার। পৃথিবীর ভারসাম্য টিকিয়ে রাখার অন্যতম এক উপাদান বিয়ে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনে কারিমে ইরশাদ করেন—
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً
‘আর একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’ সূরা রুম, আয়াতক্রম : ২১
আল্লাহ পাক অন্যত্র ইরশাদ করেন—
هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ
‘তারা (স্ত্রীগণ) তোমাদের পোশাক এবং তোমরা (স্বামীগণ) তাদের পোশাকস্বরূপ।’ সূরা বাকারা, আয়াত-ক্রম : ১৮৭
বিয়ে মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তবে অনস্বীকার্য যে, বিয়েকে ঘিরে আমাদের সমাজে নানারকম জটিলতা বিদ্যমান। ইসলাম সামাজিক ভারসাম্য রক্ষায় সবকিছুকে সহজ করেছে। কিন্তু সামাজিক নিয়মনীতি নামক পীড়াদায়ক ব্যবস্থাপনা বিয়েকে কঠিন বানিয়ে দিয়েছে। আর মানুষ যখন থেকে দ্বীনী ব্যবস্থাপনাকে উপেক্ষা করে সামাজিক নিয়মনীতির অনুকরণ শুরু করেছে, সামাজিক বিশৃঙ্খলা কেবল বৃদ্ধিই পেয়েছে।
আমাদের সমাজে এখন গরীব পিতা-মাতার কাছে সন্তানের বিয়ে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুবক যুবতী পড়াশুনা, ক্যারিয়ার ও দারিদ্র্যের শঙ্কায় চিন্তাক্লিষ্ট হয়ে বিবাহ থেকে বিমুখ থাকছে। বিপুল পরিমাণ সম্পদ সঞ্চয় না করা পর্যন্ত বিয়ের ক্ষেত্রে একপ্রকার অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। অথচ রাসূল (সা.) সাদাসিধে বিয়ের জন্য উৎসাহিত করেছেন। এরূপ বিয়ের ক্ষেত্রে বরকতের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। আমরা রাসূল (সা.) এর যুগের দিকে তাকালে দেখি, সামান্য লোহার আংটি দ্বারা বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ভালোমতো দ্বীন বুঝার তাওফিক দান করুন।
আমার অত্যন্ত প্রিয় ভাই, আমার দেখা অন্যতম মেধাবী মানুষ, অনন্য যোগ্যতার অধিকারী আলেমে দ্বীন, মাওলানা ইবাদ বিন সিদ্দিক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের অনুসরণে ১০ জুন’২০২১ বৃহস্পতিবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।
ইবাদ ভাই আমার প্রিয়জন, সহপাঠী, বন্ধু। নানান পরিচয়ে আমি তাকে চিনি। সময়ের মেধাবী তরুণ ইবাদ বিন সিদ্দিক ভাইয়ের সাথে পরিচয় কবে কোথায় মনে নেই৷ তবে ঘনিষ্ঠতার সূচনা ঐতিহ্যবাহী জামেয়া দারুল মায়ারিফ আল ইসলামিয়ায় অধ্যয়নকালে। টেকনোলজিতে আমাদের অঙ্গনের অন্যতম মেধাবী হিসেবে তিনি সর্ব-স্বীকৃত। সিলটেক ক্রিয়েটিভ এজেন্সি পরিচালনার পাশাপাশি জামেয়া তা’লীমুল কুরআন সিলেটে দ্বীনী খিদমাতে যুক্ত।
আমি ব্যক্তিগতভাবে ইবাদ ভাইকে উদারমনা, আন্তরিক হিসেবেই পেয়েছি। জামেয়া দারুল মায়ারিফে থাকাকালীন একসাথে চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া, দেশ ও সমাজ চিন্তার আদান-প্রদান হতো। ভবিষ্যৎ কর্ম ভাবনা নিয়ে আমাদের আলাপ চলতো অবিরাম। তার সূক্ষ্ম ভাবনার ক্ষমতা ঈর্ষণীয়। দোয়া করি, আল্লাহ তায়ালা তাঁর কাজকর্মে বারাকাত দান করুন।
বিবাহ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করার সাথে সাথে তার জীবন ধারণের জন্য কিছু চাহিদা দিয়েছেন এবং চাহিদা মিটানোর পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন। মানব জীবনে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ন্যায় জৈবিক চাহিদাও গুরুত্বপূর্ণ। এই চাহিদা পূরণের জন্য ইসলাম বিবাহের বিধান দিয়েছে।
সৃষ্টিগতভাবেই নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। নারী বিনে পুরুষ আর পুরুষ বিনে নারীর জীবন মরুবালূর চর।
আমার দুর্ভাগ্য যে, প্রবাসে অবস্থানের কারণে প্রিয় মানুষটির বিয়েতে থাকতে পারছি না। এই আক্ষেপ অনেকদিন পোড়াবে নিশ্চিত।
বলা হয়, বিয়ে মানব জীবনে পূর্ণতা নিয়ে আসে। একান্তপ্রত্যাশা, ইবাদ ভাই ও তাহমিদা ভাবীর জীবনেও বিয়ে পূর্ণতা নিয়ে আসুক।
মাসুম আহমাদ
লেখক : তরুণ আলেম, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব
সাহেবজাদা, খলীফায়ে মাদানী হযরত শায়খে কৌড়িয়া রহ.